কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এবং একাউন্ট খোলার পরে সেখান থেকে কিভাবে বায়ার ম্যানেজ করব এ বিষয়গুলো একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নতুন অবস্থায় প্রবেশ করে থাকেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টিতে অনেক কনফিউশনে থাকবেন। বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করলে দেখবেন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর এর মাধ্যমে অনেক বেকার যুবসমাজ তাদের আয়-রোজগারের উপায় খুঁজে পেয়েছে। তাদেরকে লক্ষ্য রেখে অনেকেই নতুন অবস্থায় ফ্রিল্যান্সিং জগত থেকে টাকা ইনকামের চেষ্টা করে থাকে। 
কিভাবে-ফ্রিল্যান্সিং-একাউন্ট-খুলব
কিন্তু তারা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এই বিষয়টিতে খুব একটা অবগত না হওয়ার পরিপেক্ষিতে মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা ইনকাম করতে পারে না। তাই আজকে এই আর্টিকেলটি একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিকস হতে চলেছে। আজকে উক্ত বিষয়টি বাদে এই আর্টিকেলের অভ্যন্তরে আরো যে সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হল ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল এবং ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কিভাবে তুলতে হয় এ সকল বিষয় সম্পর্কে। সুতরাং ফ্রিল্যান্সার একাউন্ট এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এ বিষয়গুলো জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ফ্রিল্যান্সিং কি

ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত একটি স্বাধীন বা মুক্ত পেশা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। একজন ফ্রিল্যান্সার তার খেয়াল খুশি মত সকল ধরনের কাজ সম্পন্ন করে জমা দিতে পারেন বলে এদিকে মুক্ত পেশা হিসেবে অভিহিত করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং এর আরও একটি সংজ্ঞা হলো একজন ফ্রিল্যান্সার তার work experience, skills, knowledge ইত্যাদি বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে বায়ারহান্টিং থেকে শুরু করে কাজ জমা দেওয়া পর্যন্ত এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সারদের সেলফ ইমপ্লয়ড ও বলা হয়। 
অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার সময় আপনার যেহেতু কোনরকম ধরা বাধা নিয়ম কানুন বা সময় বেঁধে দেওয়া থাকে না তাই এটিকে সেলফ এমপ্লয়েড বলা হচ্ছে। বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সাররা পার্মানেন্ট ভাবে কোন ব্যক্তি বা অফিসের কাজ করে না। তাই একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের অবশ্যই এ বিষয়টিতে জানা উচিত যে কোন কোন সেক্টরে কিভাবে বায়ারের কাছ থেকে কাজ নিয়ে জমা দিতে হবে। আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই রিমট জব না করে থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাজ করে থাকবেন। 

তবে যারা রিমোট জব করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে একটি এজেন্সি বা কোম্পানির আন্ডারে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের আরো একটি সুবিধা হল আপনি ঘরে বসেই সব ধরনের কাজ অনলাইন এর মাধ্যমে করতে পারছেন। ধরুন আজকে আপনার কাজ করতে ইচ্ছে করছে না তাহলে সহজেই সেটি অফ করে বিশ্রাম নিতে পারবেন যা অন্যান্য অফিসের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। আর এজন্যই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এ বিষয়টি জেনে মার্কেটপ্লেসে তাদের ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে পারবে এবং সেখান থেকে টাকা ও ইনকাম করতে পারবে।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর থেকে যদি আপনি টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে প্রথমেই আপনাকে উক্ত কাজটি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। ধরুন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতায় যে সকল কাজ রয়েছে সেগুলো বিষয়ে যে কোন একটিতে অভিজ্ঞ হতে হবে। সেই অনুযায়ী আপনাকে মার্কেটপ্লেসে প্রফেশনাল মানের একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। অবশ্যই আপনাকে একাউন্টটিতে আপনার সকল ধরনের স্কিলস এবং এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করতে হবে যার ফলে বায়ার আপনাকে কাজের অর্ডার দেবে। 

বিশেষ করে আপনার পোর্টফোলিও তৈরি করুন যার পরিপ্রেক্ষিতে বায়ার আপনার কাজের দক্ষতা সম্পর্কে বুঝতে পারবে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সফলতা হওয়ার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কমিউনিকেশন। দেখা গেল আপনার প্রোফাইলের সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু বায়ারের সাথে কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকার কারণে আপনি অর্ডার নাও পেতে পারেন। বায়ারকে যদি বোঝাতে অক্ষম হন যে আপনি কাজটি কোন ক্যাটাগরিতে করতে চাচ্ছেন, তাহলে অবশ্যই সেই ব্যক্তি বা বায়ার আপনাকে কাজের অর্ডার দেবে না এটাই স্বাভাবিক। 

এজন্য আপনি কিভাবে এবং কেমন মানের কাজ বায়ার কে প্রোভাইড করতে পারবেন সেটি কমিউনিকেশনের মাধ্যমে আপনাকে বোঝাতে হবে। চলুন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের প্রথম ধাপ অর্থাৎ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এবং সেই অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল সেট করব সকল বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল (ফ্রিল্যান্সিং app)

ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল ক্রিয়েট করার জন্য মার্কেটপ্লেসে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে। বর্তমানে অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেখানে আপনি আপনার স্কীল অনুযায়ী প্রফাইল সাজাতে পারবেন। যদি আপনি সঠিকভাবে আপনার প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে পারেন সে ক্ষেত্রে বায়ার আপনাকে অবশ্যই কাজের অর্ডার দেবে। পাশাপাশি মার্কেটপ্লেসগুলোর টার্মস এন্ড কন্ডিশন গুলো আপনাকে সঠিকভাবে ফলো করতে হবে। যেমন আপনি যদি Fiverr মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোন রকম টুলস ব্যতীত একটিভ থাকতে হবে। 

পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর আপনাকে রিফ্রেস করতে হবে। অনেকেই কিছু এক্সটেনশন ব্যবহার করে অটো রিফ্রেস করে থাকে। এতে করে একাউন্ট ব্যান হয়ে যায়। সুতরাং আপনি যদি মার্কেট পেজ থেকে সত্যিই টাকা আর্নিং করতে চান তাহলে সঠিক পথে থেকে আপনাকে সকল ধরনের কন্ডিশন মেনেই কাজ করতে হবে। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল ক্রিয়েট করার জন্য আরও একটি বিষয় হলো আপনাকে মার্কেটপ্লেস সম্বন্ধে ধারণা রাখতে হবে। নিচে কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর নাম তুলে ধরা হলো। এরপরে আমরা মার্কেটগুলোতে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব সে বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
  • Fiverr.
  • Upwork.
  • Guru.
  • Kwork.
  • SEO Clark.
  • Freelancer.com.
  • Legit.com.
  • People Per Hour.
  • 99 Designs.
  • Dribble.
  • Simply Hired.
উপরে বর্ণনাকৃত সকল মার্কেটপ্লেসগুলোতেই সকল ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং জগতের যে কোন একটি বিষয়ে নিজেকে এক্সপার্ট হিসেবে তৈরি করতে পারেন তাহলে উক্ত মার্কেটপ্লেসগুলোতে একাউন্ট ক্রিয়েট করে সেখান থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে আসতে পারবেন। তবে বিষয়টি এতটাও সহজ এবং দ্রুত সম্ভব নয়। মোটামুটি কাজ পেতে আপনাকে সময় দিতে হবে ৮ থেকে ৯ মাস। ৪-৫ মাস আপনার লেগে যাবে যে কোন ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা নিতে। 

এরপরে মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে কাজের জন্য খোঁজাখুঁজি করতে পারেন। অনেকে মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ না পেলে আউট অফ মার্কেটপ্লেস যেমন LinkedIn, Facebook, Instagram, Email Marketing ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করে আউট অফ মার্কেটপ্লেস থেকে কাজের সন্ধান করে থাকে। এতে করে তারা অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করে।

ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট

পাঠক আপনি যদি উপরের লক্ষ্য করেন তাহলে আমরা অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস এর নাম আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি। ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল ক্রিয়েট করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সুন্দরভাবে একাউন্ট তৈরি করতে হবে। মোটামুটি সকল ধরনের ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খোলার বিষয়গুলোতে Gmail Account লাগবে এবং অবশ্যই ভেরিফাইড জিমেইল একাউন্ট আপনার থাকতে হবে। আমরা আজকে আপনাদের মাঝে Freelancer.com এই মার্কেটপ্লেসটিতে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এ বিষয়গুলো জানাবো। তাই প্রত্যেকটি ধাপ এবং বিষয়গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন।

প্রথম ধাপ

সর্বপ্রথমে আপনাকে freelancer.com এই ওয়েবসাইটিতে প্রবেশ করতে হবে। আপনি আপনার মোবাইল অথবা ল্যাপটপের গুগল ক্রোম ব্রাউজারে গিয়ে এটি লিখে সার্চ দিলে আপনার সামনে সর্বপ্রথমে যে ওয়েবসাইটটি আসবে সেটি মূলত অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। সেখানে ক্লিক করলে আপনার সামনে “Earn Money Freelancing” নামে একটি অপশন চলে আসবে। 
অথবা উপরে ডানদিকে কর্নারে “Sign up” অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলে আপনাকে অন্য একটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। নিচের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করুন তাহলে সবকিছু সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন।
কিভাবে-ফ্রিল্যান্সিং-একাউন্ট-খুলব


দ্বিতীয় ধাপ

ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল ক্রিয়েট করার দ্বিতীয় ধাপে এসে আপনাকে যেই পেজে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। সেখানে Gmail account, Facebook account অথবা ম্যানুয়ালি আপনার তথ্য প্রদান করে একাউন্ট খোলার কথা বলা হবে। তবে আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনি অবশ্যই Gmail account ব্যবহার করে একাউন্ট ক্রিয়েট করবেন। আসুন বিষয়গুলোকে একটু পয়েন্ট আকারে জেনে নেওয়া যাক।
  • প্রথম বক্সে আপনি আপনার ভেরিফাইড প্রফেশনাল Gmail account এর নাম লিখে দিবেন।
  • দ্বিতীয় বক্সে এসে আপনার পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
  • এরপর আপনাকে “I agree to film sir user agreement and privacy policy” এই অপশনটিতে ক্লিক করে দিতে হবে। এর অর্থ আপনি তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশনে রাজি আছেন।
  • সর্বশেষে “Join Freelancer” এই অপশনটিতে ক্লিক করলে আপনাকে আরো একটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। নিচের স্ক্রিনশটটি ভালো করে লক্ষ্য করলে সকল কিছু বুঝতে পারবেন।
কিভাবে-ফ্রিল্যান্সিং-একাউন্ট-খুলব


তৃতীয় ধাপ

ফ্রান্সিং মার্কেটপ্লেসে অর্থাৎ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এই বিষয়টির তৃতীয় ধাপে এসে username দিতে বলা হবে। যদি নাম খুঁজে না পান সে ক্ষেত্রেও টেনশনের কোন কারণ নেই। অটোমেটিক ভাবে আপনার সামনে কিছু username সাজেস্ট করা হবে। যেটা থেকে আপনি আপনার পছন্দমত username সিলেক্ট করতে পারবেন। সিলেট হয়ে গেলে “Next” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
কিভাবে-ফ্রিল্যান্সিং-একাউন্ট-খুলব


চতুর্থ ধাপ

এই পর্যায়ে এসে আপনাকে অ্যাকাউন্টের ক্যাটাগরি নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু আমরা টাকা আয় করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রবেশ করেছি সেহেতু আমরা অবশ্যই freelancer account খুলবো। তাই টাকা ইনকাম করার জন্য হলে অবশ্যই আপনাকে “I want to work” এই অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। যদি আপনি কারো কাছ থেকে কাজ করিয়ে নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে “I want to Hire” এই অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। নিচের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করুন তাহলে অপশন গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।
কিভাবে-ফ্রিল্যান্সিং-একাউন্ট-খুলব


পঞ্চম ধাপ

এ পর্যন্ত মোটামুটি ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল এর সাইন আপ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন আপনাকে আপনার স্কিল অনুযায়ী সবকিছু প্রোভাইড করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে কাজ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সামনে এগোতে চান সেই কাজের অভিজ্ঞতা এবং স্কিল গুলো তুলে ধরতে হবে। যে সকল কাজ সম্পর্কে আপনি জানেন এবং কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন সেগুলো সিলেক্ট করবেন। যে ধরনের কাজ আপনি সিলেক্ট করবেন আপনার হোমপেজে সে ধরনের কাজের বিষয়গুলোই অটোমেটিক চলে আসবে। কাজগুলো সিলেট হয়ে গেলে আপনাকে “Next” অপশনে ক্লিক করতে হবে।

ষষ্ঠ ধাপ

আমরা ইতিমধ্যে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এ সম্পর্কে জানার জন্য freelancer.com এ মার্কেটপ্লেসে সকল ধরনের তথ্য ইনক্লুড করার চেষ্টা করেছি। এই পর্যায়ে এসে আপনাকে আপনার ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল এর কিছু ডিটেলস দিতে হবে। আসুন বিষয়গুলো একটু জেনে নেওয়া যাক।
  • সর্বপ্রথমে আপনাকে একটি প্রোফাইল পিকচার আপলোড করতে হবে। অবশ্যই পিকচারটি সুন্দর এবং সাবলীল হওয়া উচিত।
  • আপনার সম্পূর্ণ নাম লিখে দিতে হবে।
  • আপনি যতগুলো ভাষা জানেন সেই ভাষার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ভাষাগুলো সিলেক্ট করুন।
  • কাজের অভিজ্ঞতা যেগুলো আপনার রয়েছে সেগুলো দিয়ে দিতে হবে।
  • সবকিছু সঠিক ভাবে দেওয়ার পর “Next” বাটনে ক্লিক করতে হবে।

সপ্তম ধাপ (ফ্রিল্যান্সার ব্যাংক একাউন্ট)

ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খোলার সপ্তম পর্যায়ে এসে ফ্রিল্যান্সার ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করতে হবে। এই বিষয়টিকে বলা হচ্ছে “payment method”। আপনি আপনার পেমেন্ট মেথড যুক্ত করে সেটি ভেরিফাই করে দিবেন। এখানে আপনি আপনার Credit card, Debit card, PayPal account ইত্যাদি সকল ধরনের পেমেন্ট মেথড যুক্ত করতে পারবেন। তবে আপনি যদি চান এগুলো পরেও যুক্ত করে নিতে পারবেন। এজন্য “Skip for now” এবার বাটনটিতে ক্লিক করে দিবেন।

শেষ ধাপ

ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল ক্রিয়েট করার একদম শেষ পর্যায়ে আসলে আপনাকে একটি Promotion পেজ শো করানো হবে। অর্থাৎ আপনাকে কিছু টাকা পেয়ে করে মেম্বারশিপ নেওয়ার কথা বলা হবে। যেহেতু আপনি নতুন হিসেবে এই সেক্টরে প্রবেশ করেছেন সেহেতু এটার প্রয়োজন হবে না। তাই এখানেও “Skip for now” এই অপশনটিতে ক্লিক করে দেবেন।

উপরের সকল বিষয়গুলো সঠিকভাবে শেষ করে আপনি যদি এ পর্যন্ত আসতে পারেন তাহলে আপনার freelancer.com এর একটি একাউন্ট ক্রিয়েট করা সম্পূর্ণ হয়ে গেল। এভাবে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টটি প্রফেশনাল মানের তৈরি করে সেখান থেকে কাজের অর্ডার নিতে পারবেন। একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে পরবর্তীতে আপনি যে কাজ বা প্রজেক্টগুলো নিতে চাচ্ছেন সেগুলোতে ক্লিক করে বিড (Bid) করতে হবে।

একাউন্ট ক্রিয়েট করার পর প্রয়োজনীয় বিষয়

Freelancer.com এর অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট হয়ে গেলে আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো আমাদের পূরণ করতে হবে। অনেকে রয়েছেন কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এ বিষয়টিতে শুধুমাত্র উপরের বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকে। এগুলো বাদেও আরো কিছু এক্সট্রা বিষয় রয়েছে যেগুলো করার মাধ্যমে আপনার একাউন্টটি প্রফেশনাল মানের হয়ে যাবে। পাশাপাশি আপনার অ্যাকাউন্ট পরবর্তীতে কোনরকম ঝামেলায় বা ব্যান হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। নিচে ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল ক্রিয়েট করার পর যে সকল প্রয়োজনীয় বিষয় আমাদের করতে হবে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
  • আপনি যে Gmail account দিয়ে freelancer.com এ একাউন্ট ক্রিয়েট করেছেন সেটি পুনরায় ভেরিফাই করতে হবে।
  • উক্ত জিমেইল ইনবক্সে আপনি একটি ভেরিফাই করার অপশন পেয়ে যাবেন। সেখানে ক্লিক করলেই আপনার একাউন্টটি ভেরিফাই হয়ে যাবে।
  • আপনার সচল একটি মোবাইল নম্বর অ্যাড করে দিবেন এবং সেটিও ভেরিফাই করে নিবেন।
  • প্রোফাইলে আপনার সঠিক অ্যাড্রেস অর্থাৎ পূর্ণ ঠিকানা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
  • আপনার কাজের অভিজ্ঞতাগুলো সঠিকভাবে প্রদর্শন করবেন যাতে করে বায়ার আপনার কাজ সম্বন্ধে সঠিকভাবে ধারণা পেয়ে যায়।
আপনি যদি উপরের এই কয়েকটি বিষয় সঠিকভাবে শেষ করেন তাহলে দেখবেন আপনার অ্যাকাউন্টটি সম্পূর্ণভাবে তৈরি এবং একটিভ হয়ে গেছে। এরপর থেকে আপনি আপনার freelancer account dashboard থেকে সকল ধরনের কাজের প্রজেক্ট দেখতে পাবেন। আপনি আপনার কাজের অভিজ্ঞতা এবং স্কিল অনুযায়ী সেসকল কাজের উপরে ক্লিক করে বিড করতে পারবেন। 

আজকাল যেহেতু ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে সেক্ষেত্রে কাজ পাওয়া একটু মুশকিল হতে পারে। তাই আপনাকে ধৈর্য সহকারে এগিয়ে যেতে হবে এবং একপর্যায়ে দেখবেন আপনি সফলতা অর্জন করেছেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কিভাবে তুলতে হয়

একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এই প্রশ্নটির পাশাপাশি আরও একটি বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন হল ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কিভাবে তুলতে হয়। আপনি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের যে কোন মার্কেটপ্লেসেই অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেখানে ডলার জমতে শুরু করবে। তবে ডলার ঠিক তখনই জমবে যখন আপনি ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল এ কাজের অর্ডার পাবেন। কাজ সম্পন্ন করার পর বায়ার কাজ গ্রহণ করে তার পরিবর্তে আপনাকে পেমেন্ট করবে। 
আপনি আর্টিকেলের উপরের অংশে লক্ষ্য করলে দেখবেন freelancer.com এই মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনাকে পেমেন্ট মেথড যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। সেখানে আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যদি যুক্ত করেন তাহলে সেখানে টাকা ট্রান্সফার হবে। PayPal, payoneer, skrill, neteller, Xoom, tap tap send এগুলোর মাধ্যমেও টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। চলুন তাহলে এবার জেনে নিব ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা তোলার জন্য কোন কোন বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন।
  • ব্যাংকের নাম এবং ঠিকানা, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর এবং সেই ব্যাংকের Swift code।
  • আপনি যে ব্যাংকের আওতায় একাউন্ট খুলেছেন সেটি অবশ্যই ইন্টারন্যাশনালি ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা থাকতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই ব্যাংকগুলো হল Islami Bank, Bank Asia, BRAC Bank, DBBL বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
  • আপনি যে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের মার্কেটপ্লেসে কাজ করবেন সেই দেশের একটি ব্যাংকের নাম সংগ্রহ করুন। পরবর্তীতে আপনি আপনার দেশীয় ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে উক্ত ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা যাবে কিনা সেটি জেনে নিবেন।
  • এ বিষয়টি জানার পর আপনাকে সেই দেশের মধ্যস্থাকারী ব্যাংকটির Router Number জোগাড় করতে হবে। এটি আপনি সেই ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই পেয়ে যাবেন।
যদি উপরের সকল কাজগুলো সঠিকভাবে করে থাকেন তাহলে আপনার মার্কেট প্লেসের টাকাগুলো ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই আপনার একাউন্টে পৌঁছে যাবে। প্রতিবার টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেস ভেদে আপনাকে ৫-১০ ডলার খরচ করতে হবে।

শেষের কথা

বর্তমান সময়ে বেকার জনগোষ্ঠী যদি তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় তাহলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর একটি অন্যতম উপায় হিসেবে উল্লেখিত। তাই আপনিও যদি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে থাকেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হতে পারে আপনার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। যদিও ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সফলতা অর্জন করা খুব একটা সহজ হবে না। কিন্তু আপনি যদি সঠিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন এবং ধৈর্য এবং পরিশ্রম সহকারে সামনে এগিয়ে যান তাহলে অবশ্যই সফলতা অর্জন করবেন বলে আমরা আশাবাদী। 

সেই আশাকে আরো একধাপ উন্নীত করতেই আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলব এবং ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল প্রফেশনাল ভাবে সেট করব সেই বিষয়গুলোই জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের freelancer.com এই মার্কেটপ্লেসটির অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে যে তথ্যগুলো প্রোভাইড করা হয়েছে তা আপনাদের অনেকটাই কাজে আসবে। যদি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করার সময় আপনাদের কোন রকম সমস্যা মনে হয় তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতিসত্বর সেটির সলিউশন দেওয়ার চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url